অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা
-রেহানা দেবনাথ

 

 

রিনার গ্রাজুয়েশনের রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে,ভালোভাবে পাশও করেছে।রিনা খুব খুশি পাশ করার জন্য তার চেয়েও বেশী আনন্দিত হচ্ছে দুমাস পর বিয়ে করে পাকাপাকি ভাবে আকাশের সঙ্গে থাকতে পারবে ভেবে।দু বছর হলো আকাশের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।প্রতিদিন ফোনে কথা হয় কিন্তু দেখা সাক্ষাৎ তেমন হয় না বললেই চলে। একবার ফ্যামিলি পিকনিক হয়েছিল তখন দেখা হয়েছিল। লজ্জায় রিনা বেশি কথা বলতে পারেনি তাছাড়া সুযোগও পায়নি! সবসময় গুরুজনরা কাছাকাছি ছিল। সেখানে আকাশের সহকর্মী ও বেস্টফ্রেন্ড জিৎ এর সঙ্গে পরিচয় হয়। জিৎ দেখতে যেমন হ্যান্ডসাম তেমনি মজার ছেলে। রিনার ওকে খুব পছন্দ হয়। প্রতিদিন আকাশের ফোনে আকাশের চেয়ে জিৎ এর সঙ্গে বেশি কথা হয়। রিনা ওর থেকেই আকাশের পছন্দ,অপছন্দের কথা জানতে পারে। ধীরে ধীরে রিনা ও জিৎ এর মধ্যেও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
রিনা বিয়ের স্বপ্নে মশগুল হয়ে যায়। বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য একদিন আকাশের সঙ্গে বেরোনোর ইচ্ছে প্রকাশ করে কিন্তু আকাশ রাজি হয় না বলে মা এইসব পছন্দ করে না,যা হবে বিয়ের পর।রিনার একটু খারাপ লাগলো। অবশেষে বিয়েরদিন এলো ধুমধাম করে বিয়ে হলো। বাসর ঘরে রাত জাগার সময় সবাই কত হাসি ঠাট্টা করছে আকাশ,জিৎও ওদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে।জিৎ আকাশের অনেক খেয়াল রাখছিল তা দেখে রিনা খুব খুশিই হলো। বিয়ে ও বৌভাত দুটোই ভালোভাবে মিটে গেল।আত্মীয় স্বজনেরা বলতে লাগলো রিনার খুব ভাগ্য ভালো গায়ের রং চাপা তবুও রাজপুত্তুরের মত বর পেয়েছে। শ্বশুর বাড়ির আত্নীয় স্বজনরা বললো তোমার বাপের অনেক সৌভাগ্য যে আমাদের আকাশের মত ছেলেকে জামাই হিসেবে পেয়েছে। অবশেষে ফুলশয্যার সময় এলো। রিনা খাটের মধ্যে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আর কল্পনা করতে থাকে আকাশ এসে প্রথমে কি বলবে,সে কি করবে,ঘোমটা খুললেই কি ওকে জড়িয়ে ধরবে, তখন ও কি করবে! আকাশের বুকে মাথা রেখে জমানো অভিমানগুলোর কথা বলবে নাকি জড়িয়ে ধরে আদর করবে। এইসব ভাবতে ভাবতে রিনার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ হলো। খাটের দিকে এগিয়ে আসার পদধ্বনি শুনতে পেয়ে রিনার হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেল, ঘামতে শুরু করলো,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল! রিনা ঘোমটার ফাঁক দিয়ে দেখলো আকাশ খাটের উপর এক ধারে দাঁড়িয়ে আছে,উসখুস করছে,মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে। রিনা ভাবলো বিয়ের ধকলে হয়তো আকাশকে এমন দেখতে লাগছে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর রিনা স্থির থাকতে পারলো না। সে আকাশের উদ্যেশ্যে বলে উঠলো তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? আকাশ বলে না একটু ক্লান্ত লাগছে, তুমি খাটে শুয়ে পড় আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি। রিনা কিচ্ছু বলার আগেই আকাশ আলো নিভিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। রিনার খুব খারাপ লাগলো। এই রাতটা জীবনে একবারই আসে,তার জন্য ও কত স্বপ্ন দেখেছে!আকাশ ওর স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়ে শুয়ে পড়ল। চিন্তা করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো। যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখলো সোফায় আকাশ নেই। রিনা ভাবলো তাহলে অনেক বেলা হয়ে গেছে ঘড়ি না দেখেই বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে গেল। তারপর বাইরে বেরিয়ে দেখছে বাইরেটা তখনও হালকা অন্ধকার। রিনা রুমে ফিরে এসে বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো আকাশ কোথায় গেল। নীচের তলায় অসুস্থ শ্বশুর শাশুড়ী আছে তাঁদের কাছে গেল নাকি! সাতপাঁচ ভাবতে থাকলো এমন সময় আকাশ ঘরে ঢুকলো। রিনাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বললো তুমি জেগে গেছো। সোফায় খুব গরম লাগছিলো তাই পাশের ঘরে শুতে গিয়েছিলাম।কথাটা বলে কোন পাল্টা প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফ্রেস হয়ে নীচে নেমে গেল। রিনাও পিছন পিছন নীচে নেমে এলো।শাশুড়ির ঘরে ঢুকে তাকে প্রণাম করলো। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখে জিৎ ও আকাশ পাশাপাশি বসে হাসাহাসি করছে। কালকের আকাশ আর আজকের আকাশের সঙ্গে কত পার্থক্য! জিৎ রিনার সঙ্গে কথা বলতে থাকে তখন জানতে পারে যে জিৎও এই বাড়িতে থাকে ওদের পাশের ঘরে। জিৎ ই জানায় দশ বছর ধরে ওদের বন্ধুত্ব। জিৎ মেদিনীপুরের ছেলে এখানে মেসে থাকতো আর আকাশের সঙ্গে একই অফিসে কাজ করতে থাকে। আকাশের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আট বছর আগে মেসে থাকা নিয়ে সমস্যা হয় তখন আকাশ ও তার মায়ের অনুরোধে সে এই বাড়িতে থাকতে শুরু করে। রিনা ভাবতে থাকে বিয়ের পাকাকথার সময় একবারও জিৎ এর থাকার বিষয়টি বলে নি! শুধুমাত্র অসুস্থ মা,বাবার কথা বলেছে।সারাদিন কেটে গেলো রাতের খাবার শেষ করে রিনা শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকলো। ঘড়িতে দেখলো রাত বারোটা বাজে তখন আকাশ আসছে না। ওর ঘুম ঘুম পেতে লাগলো এমন সময় দরজায় আওয়াজ হলো আকাশ ঘরে ঢুকলো। তারপর রিনার কাছে এলো ওর মাথায় হাত দিয়ে বললো সোনা ঘুমিয়ে পড়ো অফিসের অনেক কাজ জমে গেছে রাত জেগে করতে হবে তাই জিতের ঘরে যাচ্ছি। রিনা নম্র সুরে বললো ঠিকআছে আমি বসে আছি তুমি এখানে বসে কাজ করো। আকাশ শান্ত গলায় বলে না না জিৎ আর আমি দুজনে মিলে কাজটা করবো। তুমি লক্ষী মেয়ের মত ঘুমিয়ে পড়ো।বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। দিনের বেলায়ও রিনা লক্ষ্য করেছে আকাশ ওর সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে আর রাত্রেও বাহানা করে ওর সঙ্গে এক বিছানায় শোয় না! এভাবে মাসখানেক কেটে যায়।রিনার সঙ্গে আকাশের কোনো যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রিনা আর চুপ থাকতে পারে না লজ্জা ভুলে গিয়ে একদিন রাতে নিজের থেকেই আকাশকে জড়িয়ে ধরে। তখন এক ঝটকায় আকাশ রিনার বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তখন রিনা কাঁদতে থাকে আর বলে তোমার যখন আমাকে অপছন্দ তাহলে বিয়ে করতে গেলে কেন? আকাশ তখন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে বলে না না তেমন কিছু নয়।আসলে আমি চাই আমরা দুজন দুজনকে ভালো মতো জানি,মনের সম্পর্ক গড়ে উঠুক তারপর না হয়—।রিনা চুপ করে যায়। ভাবে কিসব ভুলভাল কথা সে চিন্তা করেছে এই একমাসে আর আকাশ ওর সম্পর্কে কত ভেবেছে। রিনা ভাবলো সত্যিই আকাশ কত ভালো ওর খেয়াল রাখে। ওর দিকটাও ভাবতে হবে! রিনার সঙ্গে জিৎএর বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়ে ওঠে। শপিং করা,ডাক্তার দেখানো,ঘুরতে যাওয়া সব জায়গায় তিন জনে মিলে যায়। দিনগুলো আনন্দেই কেটে যায় কিন্তু রাত হলেই মাঝে মাঝে রিনার যৌন ক্ষিধে পায় আর তখন প্রচন্ড শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হয়। এইভাবে আরো ছয় মাস কেটে যায়। জিৎ তিনদিনের জন্য মেদিনীপুরের বাড়িতে গেছে। সেইদিন রাতে একপ্রকার জোর করেই রিনা আকাশকে নিজের বিছানায় শোয়ায় ও আদর করতে শুরু করে। আকাশ লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে আর চিৎকার করে বলে আমার কাছ থেকে দূরে যাও! আমি এইসব একদম পছন্দ করি না। রিনাও চিৎকার করে তাহলে আমায় বিয়ে কেন করলে? অসুস্থ মা বাবা আর সমাজের জন্য,কথাটা বলে আকাশ চুপ করে থাকে।রিনার চোখে জল এসে গেল, তাকে সামলে নিয়ে বলল তার মানে আমি বুঝতে পারলাম না। তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো? আকাশ মৃদু গলায় বলল হ্যাঁ। রিনা বলে তাহলে তাকে বিয়ে করলে না কেন? কোথায় সমস্যা ছিল? আকাশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে সমস্যা অনেক আছে। আমি একজন পুরুষকে ভালোবাসি আর সমাজ পুরুষের সঙ্গে পুরুষের সম্পর্ক মেনে নেয় না। বিয়ে না করে সারাজীবন দুজনে একসঙ্গে কাটিয়ে দেব ভেবেছিলাম। রিনার চোখে জলের ধারা বইছে,সে কি বলবে বুঝতে পারছে না।আকাশও চুপ করে গেল। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলে,তোমাকে ঠকানো বা কষ্ট দেবার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। শুধুমাত্র অসুস্থ বাবা মায়ের ইচ্ছাপূরণ করার জন্য বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। তাদের বংশধরের মুখ দেখে ইহলোক ত্যাগ করার ইচ্ছা। প্রথমে ভেবেছিলাম বিয়ের পর হয়তো আমি তোমার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারবো কিন্তু আমি ব্যর্থ!তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পেরেছি কিন্তু শারীরিক সম্পর্ক গড়তে পারছি না তার একমাত্র কারণ আমি আকৃষ্ট হতে পারছি না। আমি জানি না বাবা মার ইচ্ছে কিভাবে পূরণ হবে বলে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। ওকে দেখে রিনা কিছুক্ষণের জন্য নিজের কষ্টের কথা ভুলে গেল। আকাশের জন্য কষ্ট হলো অতবড় মানুষটা নিজের চেপে রাখা কষ্ট,দুঃখ কাউকে বুঝতে দেয় নি,সারাক্ষণ হাসি মুখে আছে,কথাটি ভাবতে ভাবতে রিনার অজান্তে তার একটা হাত আকাশের মাথায় চলে যায়। রিনা আকাশকে শান্ত করে আর বলে এখন তুমি বলো আমি কি করবো? আকাশ বলে আমি জানি না! তারপর দুজনেই চুপচাপ হয়ে যায়। আকাশ বালিশে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে আর রিনা যেন তখন তার মায়ের ভূমিকা নিয়েছে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আর নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙে দরজায় করাঘাতের আওয়াজে। দরজা খুলে দেখে জিৎ দাঁড়িয়ে আছে ওর কৌতূহলী চোখ ঘরের ভিতরটায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় আকাশ তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো বললো ও তুই এসে গেছিস, তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে বলে জিতের হাত ধরে পাশের ঘরে নিয়ে গেল। রিনা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। ভাবতে থাকলো আকাশ যাকে ভালোবাসে সেকি তাহলে জিৎ!এই একমাসে সেরকম কোনো আচরণ তার চোখে পড়েনি ঠিকই তবে দুজনে একে অন্যের প্রতি যত্নশীল।রিনা ভাবতে ভাবতে জিৎ এর ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে আর শুনতে পায় আকাশ কাঁদছে আর বলছে আমি খুব খারাপ ছেলে সমাজে নিজের সন্মান আর বাবা মাকে খুশি করতে গিয়ে একটি মেয়েকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছি,এর থেকে মরে যাওয়াই ভালো। কথাটা শুনে রিনার বুকটা ছ্যাত করে ওঠে।তখন জিতের গলা শুনতে পায় আর কোনোদিন এমন কথা বলবি না,
সব ঠিক হয়ে যাবে আমি রিনার সঙ্গে কথা বলবো। রিনা ওখান থেকে নিজের রুমে চলে যায়। এইভাবেই আরো কটা দিন চলে যায়। রিনা নিজের রুমের ভিতর কাঁদতে থাকে আর বাইরে সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করে। রিনা ঠিক করে উঠতে পারে না কি করবে! বাপের বাড়ি চলে গেলে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পাগল হয়ে যাবে,এখানেও বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ি ব্যাপারটা জানতে পারলে হার্টফেল করে মারা যেতে পারে! এছাড়া ওর নিজের শরীরের একটা চাহিদা আছে সেটা পূরণ হবে কিভাবে! আর মাই বা হবে কিভাবে! যেখানে আকাশ ওর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না।
মাস খানেক পর একদিন রিনার শাশুড়ির খুব শরীর খারাপ হয়ে যায়। তখন তিনি রিনার হাত ধরে বলেন যে এই বছরই নাতি নাতনির মুখ দেখতে চান।
রিনা কেঁদে ফেলে তারপর নিজের রুমে চলে যায়। হঠাৎ জিৎ সেখানে উপস্থিত হয়। রিনার হাত দুটো ধরে বলতে থাকে যে সে যেন আকাশকে ভুল না বোঝে। জিৎ এর হাতের ছোঁয়া পেয়ে রিনার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। যেন চাতক পাখির মুখে এক ফোঁটা জল পড়েছে।জিৎ আরো বলতে থাকে আকাশ বলেছে তুমি যদি চাও নিজের বাড়ি চলে যেতে পারো তবে একটা অনুরোধ ওর বাবা মা আর মাত্ৰ কয়েকমাস বাঁচবে,ওনারা মারা গেলে তারপর যেও। রিনার কানে যেন কোনো কথা ঢুকছে না। জিতের চোখের দিকে তাকিয়ে কোন মায়াবী স্বপ্নের দেশে চলে গেছে। রিনা সবভুলে জিৎকে জড়িয়ে ধরে আর আদর করতে থাকে। জিৎ কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রিনা হতভম্বের মত বসে থাকে। পরের দিন রিনা আকাশ ও জিতের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে। পরের দিন আকাশ জানায় যে এক সপ্তাহের জন্য সে অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে,জিতেরও যাবার কথা ছিল কিন্তু এখানে কাজের চাপে তার যাওয়া ক্যানসেল হয়েছে।রিনার মুখটা ঝলমল করে ওঠে।
যথারীতি আকাশ চলে যায়। রাত্রে রিনা আবার কনের সাজে নিজেকে সজ্জিত করে বসে থাকে। আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাতে থাকে। ঘড়িতে যখন রাত একটা বাজে তখন সে হতাশ হয়ে ভাবতে থাকে জিৎ এত রাত কোনোদিন করেনি তবে এতরাত করছে কেন! তবে কি আজ ফিরবে না! এমন সময় দরজায় টোকা শুনে তার সম্বিৎ ফেরে। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে জিৎ হাতে এক গোছা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিনা আনন্দে এক ঝটকায় জিৎকে ঘরে ঢুকিয়েনেয়। হাতের গোলাপগুলোকে নিয়ে ফুলদানিতে রাখে আর কিছুটা গোলাপের পাপড়ি বিছানায় ছড়িয়ে দেয়। তারপর ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে পড়ে। জিৎ ঘোমটা তুলে বলে আমি তোমায় সঙ্গ দিতে পারবো কিন্তু অধিকার দাবি কোরো না কোনদিন কারণ আমি বলতে পারবো না।রিনা জিৎকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে কক্ষনো না,আমার স্বামীর প্রতিই অধিকার দাবি করিনি,তবে ওকে ভালোবাসি নাকি তা বুঝতে পারছি না যদিও জানি ও অন্য কোনো পুরুষকে ভালোবাসে।জিৎ কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। রিনা আরও বলে তোমার বন্ধু ও তুমি দুজনই খুব ভালো মানুষ আর কিছু না হোক তোমরা আমার ভালো বন্ধু। কথা বলতে বলতে দুজনে সুখের সাগরে ডুবে যায়।
কয়েক মাস পর রিনা একটা মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে আকাশের হাতে দেয়। রিপোর্টা দেখে আকাশ আনন্দে লাফিয়ে উঠে রিনাকে জড়িয়ে ধরে আর বলতে থাকে আমি আজ খুব খুশি তুমি আমায় বাবা হবার সৌভাগ্য দিয়েছ। রিনা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে এটা কি হলো সে তো অন্য কিছু প্রত্যাশা করেছিল। ভেবেছিলো রিপোর্ট হাতে পেয়ে আকাশ রেগে চিৎকার করবে ,অনেক ধরনের প্রশ্ন করবে অথবা ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার কথা বলবে! রিনা তখন আকাশকে বলে তুমি জানতে চাইবে না এটা কার বাচ্ছা, কিভাবে ঘটলো? না না আমি কিছুই জানতে চাই না কারণ আমি সব জানি বলে আকাশ। আরও বলে তোমাকে আমি সব দিতে পেরেছি শুধুমাত্র একটা জিনিস ছাড়া আর তারজন্যই মাঝে মাঝে বাইরে চলে যাই। তুমি যেমন আমার সবকিছুকে নিজের করে নিয়েছো, আমায় বুঝে আমার ভালোবাসা,চাহিদাকে সন্মান দিয়েছ তেমনি আমিও তোমার চাহিদাকে সন্মান জানাই আর পূরণ করার ব্যবস্থা করি।আখেরে লাভ আমারই আমি বাবা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা মা র ইচ্ছে পূরণ করতে পারবো। রিনা আকাশের কথা শোনার পর ওর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দুটোই বেড়ে যায়। রিনা
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে পাশে ফুটফুটে যমজ সন্তান একটি মেয়ে অন্যটি ছেলে। বিকেলে শশুরবাড়ির ও বাপের বাড়ির আত্মীয় স্বজনেরা রিনা ও বাচ্চাদের দেখতে আসে। বাচ্চা দুটোকে দেখে সবাই বলতে থাকে কানগুলো বাবার মত, হাত পা গুলো মায়ের মত, চুলগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু দুজনেরই বড় বড় চোখগুলো কার মত হয়েছে আমাদের সবার চোখতো ছোট ছোট! কথাটা শোনার পর রিনা আড়চোখে একবার আকাশের দিকে একবার জিৎ এর দিকে তাকায়। তারপর মুচকি হাসি হেসে দুটো বাচ্চাকে আকাশ ও জিৎ কোলে তুলে নেয় ও আদর করে। রিনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আর দুচোখ ভরে ওদের দেখতে থাকে।

Loading

Leave A Comment